রবীন্দ্রভারতীতে দুষ্কৃতীরাজ?
ভোটে জেতার পর বিজয় মিছিলের বদলে পাড়ায় পাড়ায় রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারস্বরে মাইক বাজিয়ে তিন-চারদিন ধরে তৃণমূল কর্মীরা এলাকার মানুষকে দিবারাত্র রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুধু বাধ্য করেনি, অনেকেরই শিরঃপীড়া অনিবার্য করে দিয়েছিল। পরে শহরের মোড়ে পথচারীদের রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনাবার স্থায়ী ব্যবস্থা হয় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে। সরকারী উদ্যোগে রবীন্দ্র জয়ন্তীর আয়োজন হচ্ছে সাড়ম্বরে ঘটা করে। এহেন ‘রবীন্দ্রভক্ত’ মুখ্যমন্ত্রীর ‘রবীন্দ্রময়’ সরকারের দু’বছরের শাসনে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়টি নেত্রীর অনুগত ভক্তবৃন্দদের দৌরাত্ম্যে শিক্ষাঙ্গনের পরিবর্তে তৃণমূলী আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তৃণমূলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এই শিক্ষাঙ্গনটিও এখন দলীয় গোষ্ঠী কোন্দলের শিকার হয়ে মারামারি, লাঠালাঠি এবং পেশিশক্তির বাহাদুরি প্রকাশের প্রতিযোগিতাক্ষেত্র হয়ে গেছে। পঠন-পাঠনের ব্যাপারটি মোটামুটি শিকেয় তুলে তৃণমূলী বীরপুঙ্গবরা শিক্ষাঙ্গনকে ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিভীষিকার অঙ্গন করে তুলেছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এখন আর এখানে নিরাপদ নয়। নিরাপত্তার অভাবে রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী এবং শিক্ষকরা। তৃণমূলের বিশৃঙ্খল, হিংস্র পেশিশক্তির রাজনীতি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নাম যুক্ত থাকায় অনেকে লজ্জায় মাথা অবনত করছেন। অথচ কোনো হেলদোল নেই মা মাটি মানুষের সরকারের। রাজ্যে একজন শিক্ষামন্ত্রী আছেন বলেও কেউ টের পাচ্ছেন না। আর মুখ্যমন্ত্রী! তিনি কি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো খবর রাখেন না?
মুখ্যমন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন ২০১১ সালের ২০শে জুন। একমাস কাটতে না কাটতেই ঐবছর জুলাই মাসে উন্মত্ত তৃণমূল ছাত্রদের বেধড়ক মারে ক্যাম্পাসের মধ্যেই কর্তব্যরত এক শিক্ষাকর্মীকে প্রাণ হারাতে হয়। এমন এক ভয়ানক ঘটনার পর কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন ‘রবীন্দ্রপ্রেমী’ মুখ্যমন্ত্রী? এতটুকুও রাশ টানার ব্যবস্থা করেছিলেন কি তাঁর ছোট ছোট ‘আদুরে’ ভৈরববাহিনীর? এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন এস এফ আই-র তেমন কোনো সক্রিয়তা নেই। একরকম গায়ের জোরে তৃণমূল ছাত্ররা দখল করে নেয় ছাত্র সংসদ। তারপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দখল নিয়েছে বহিরাগত অ-ছাত্র তৃণমূল দুষ্কৃতীরাও। এই তৃণমূল ছাত্র-অ-ছাত্র বাহিনীই গতবছর জুন মাসে অন-লাইনে ভর্তির বিরোধিতা করে উপাচার্যের ঘরে ঢুকে তাঁকে যথেচ্ছ হেনস্তা করে এবং ভাঙচুর করে অফিস লণ্ডভণ্ড করে দেয়। ভর্তির প্রক্রিয়া তৃণমূলীদের কবজায় আনতেই হয়েছিল এই হামলা। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের উপাচার্যই অন-লাইনে ভর্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। গত মে মাসে টোকাটুকিতে বাধা দিয়ে তৃণমূলীদের হাতে বেদম মার খান এক শিক্ষক। তার কয়েকদিন পর তৃণমূলী শিক্ষাকর্মীদের হাতে অর্ধচন্দ্র খেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে প্রাণ হাতে করে বাড়ি পালাতে বাধ্য হন রেজিস্ট্রার। শিক্ষামন্ত্রী সবই শোনেন, দেখেন, বোঝেন। কিন্তু কিছুই করেন না। বলা ভালো কিছুই করতে পারেন না। আর মুখ্যমন্ত্রী! তাঁর এসব নিয়ে সময় নষ্ট করার মতো সময় কোথায়? সর্বশেষ এক সশস্ত্র বহিরাগত একদল তৃণমূলী নিরাপত্তারক্ষীদের মেরে হটিয়ে ঢুকে পড়ে ক্যাম্পাসে। সেখানে ভিতরের অপর এক তৃণমূলবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় তাদের। শিক্ষাঙ্গন হয়ে ওঠে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর রণাঙ্গন। পরিণতি ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এমনকি পুলিসসহ ১৫-২০ জন জখম। শিক্ষামন্ত্রী তাঁর ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই দায়মুক্ত। মুখ্যমন্ত্রী এখানে বলেননি ওটা ছোটদের ছোটখাটো ব্যাপার!
- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=44177#sthash.EupK4Yna.dpuf
No comments:
Post a Comment